১১-ওরা নারিকেল পুজা করে

ওরা নারিকেল পুজা করে

যারা মৃতদেরকে আহ্বান করে তাদেরকে আমি বলি, তোমাদের এই মৃতরা.. যাদের দরজার কাছে তোমরা কান্নাকাটি কর এবং তাদের সুপারিশের আশা কর-

(هَلْ يَسْمَعُونَكُمْ إِذْ تَدْعُونَ أَوْ يَنْفَعُونَكُمْ أَوْ يَضُرُّونَ )

“ওরা কি তোমাদের ডাক শুনতে পায়- যখন তোমরা তাদেরকে ডাক, বা তোমাদের কোন কল্যাণ বা অকল্যাণের ক্ষমতা রাখে?” (সূরা শুআরা- ৭৩) না, আল্লাহ্‌র শপথ! তারা কিছুই শোনে না, কোন উপকার করতে পারে না।

দেখুন না পাঠক ঐ ছোট বালকের কীর্তি কলাপ! তার বয়স ১৩।

পিতার সাথে ভারত বেড়াতে গিয়েছে। ভারত একটি বড় দেশ। সেখানে নানারকম মা‘বূদ আছে। ওরা সব কিছুর ইবাদত করে। পশু, বৃক্ষ, জড়বস্তু, মানুষ, নক্ষত্র কোন কিছুই বাদ পড়ে না।

বালক কোন একটি মন্দিরে প্রবেশ করে দেখতে পেল লোকেরা নারিকেল পুজা করছে। নারিকেলে দুটি চোখ, নাক ও মুখ আঁকা হয়েছে। ওরা তার পুজা করতে গিয়ে আগরবাতি জ্বালায়, খাদ্য-পানীয় তার সামনে পেশ করে। বালক দেখল, তারা নারিকেলের উদ্দেশ্যে ছালাত আদায় করছে। যখন তারা সিজদা করেছে বালক তখন ফলটিকে নিয়ে পালিয়ে গেল। ওরা সিজদা থেকে মাথা উঠিয়ে দেখে ওদের মাবূদ (ভগবান) নেই! ডানে বামে নযর বুলিয়ে দেখলো একটি বালক তাদের মাবূদকে নিয়ে পালাচ্ছে। তারা উপাসনা বন্ধ করে ছুটলো বালকের পিছে পিছে। এদিকে বালক কিছু দূর গিয়েই নারিকলেটিকে ভেঙ্গে ভিতরের পানি পান করে নারিকেলটি ফেলে দিয়েছে। তারা ভগবানের এ ভগ্ন দৃশ্য দেখে চিৎকার করে উঠল। বালকটিকে ধরে তারা আচ্ছামত প্রহার করে শহরের বিচারকের কাছে নিয়ে গেল।

বিচারক তাকে বলল: তুমি মাবূদকে (ভগবানকে) ভেঙ্গেছো?

বালক: না, আমি একটি নারিকেল ভেঙ্গেছি।

বিচারক: কিন্তু এটা তো তাদের ভগবান (মা‘বূদ)!

বালক: ওহে বিচারক! আপনি কি কোন দিন নারিকেল ভেঙ্গে খেয়েছেন?

বিচারক: হ্যাঁ।

বালক: তবে আপনার নারিকেল খাওয়া ও আমার নারিকেল ভাঙ্গার মধ্যে কি তফাৎ?

বিচারক চুপ হয়ে গেলন এবং পেরেশান হয়ে পড়লেন। অত:পর উপাসকদের দিকে তাকালেন, উদ্দেশ্য তারাই এর জবাব দিক। তারা বলল: এ নারিকেলের তো দুটি চোখ, মুখ… আছে?

বালক একথা শুনে চিৎকার করে উঠল: এ কি কথা বলতে পারে? তারা বলল: না। বালক প্রশ্ন করল, সে কি শুনতে পায়? তারা বলল: না। বালক বলল: তাহলে কি যুক্তিতে তোমরা তার উপাসনা কর?

কাফেরের দল লাজওয়াব হয়ে গেল। আর আল্লাহ্‌ জালেম সমপ্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না।

বিচারক দেখল, এরা হয়তো বালকের উপর চড়াও হয়ে তাকে কষ্ট দিতে পারে, তখন বালককে লক্ষ্য করে বলল, আমরা তোমার শাস্তি নির্ধারণ করেছি। ১৫০ রুপিয়া জরিমানা।

বালক বাধ্য হয়ে তা প্রদান করল; কিন্তু বিজয়ী বেশে কোর্ট থেকে বের হল।

****

কবর পূজারীদের অপরাধ আরো জঘণ্য রূপ ধারণ করে- যখন তারা মৃত ওলীদের তাযীম বা তাদের কাছে প্রয়োজন পূরণের দুআ চেয়েই ক্ষান্ত হয় না; বরং তারা উক্ত কবর সমূহের উপর ঘর বানাতে, তাকে উঁচু করতে এবং সুসজ্জিত করতে অঢেল অর্থ-সম্পদ ব্যায় করে।

কবরের উপর যে সমস্ত ঘর বা গম্বুজ তৈরী করা হয় তা দুভাগে বিভক্ত:

১) মুসলমানদের গোরস্থানে বিভিন্ন কবরের উপর আলাদাভাবে নির্মিত গম্বুজ সমূহ।

২) মসজিদ সমূহের সাথে সংশ্লিষ্ট গম্বুজ সমূহ। অথবা কবরের গম্বুজের উপর মসজিদ নির্মাণ করা হয়। কখনো উক্ত গম্বুজ মসজিদের সামনের দিকে হয়, কখনো পিছনের দিকে, কখনো ডানে বা বামে। অথচ নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ থেকে তাঁর উম্মতকে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, (اللَّهُمَّ لَا تَجْعَلْ قَبْرِي وَثَنًا يُعْبَدُ اشْتَدَّ غَضَبُ اللَّهِ عَلَى قَوْمٍ اتَّخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ) “হে আল্লাহ্‌! আমার কবরকে পূজার স্থানে পরিণত করো না, মানুষ যার ইবাদত করে থাকে…।

আল্লাহ্‌ অভিশাপ করেছেন ঐ জাতিকে যারা তাদের নবীদের কবর সমূহকে কেন্দ্র করে মসজিদ তৈরী করেছে।” (মুয়াত্বা মালেক, আহমাদ।) আবু হুরায়রা (রা:) এর সূত্রে বুখারী ও মুসলিমের বর্ণনায় বলা হয়েছে, (لَعَنَ اللَّهُ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى اتَّخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ)  “ইহুদী খৃষ্টানদের প্রতি আল্লাহ্‌র লানত। কারণ তারা তাদের নবীদের কবরগুলোকে মসজিদে রূপান্তরিত করেছে।”

আলী (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি আবুল হায়্যায আল আসাদীকে বলেন, “আমি কি তোমাকে এমন আদেশ দিয়ে প্রেরণ করব না, যা দিয়ে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে প্রেরণ করেছিলেন? (أَنْ لَا تَدَعَ تِمْثَالًا إِلَّا طَمَسْتَهُ وَلَا قَبْرًا مُشْرِفًا إِلَّا سَوَّيْتَهُ)  কোন মূর্তী পেলেই তা ভেঙ্গে চুরমার করে ফেলবে। আর কোন কবর উঁচু পেলেই তা ভেঙ্গে মাটি বরাবর করে দিবে।” (মুসলিম)

এমনিভাবে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন, কবর পাকা করতে, চুনকাম করতে, তার উপর বসতে, কবরে লিখতে। আর তিনি অভিশাপ করেছেন ঐ সমস্ত ব্যক্তিদেরকে যারা কবরকে মসজিদ বানায় এবং সেখানে বাতি জালায়। (মুসলিম, তিরমিযি, আবূ দাঊদ প্রভৃতি)

ছাহাবা, তাবেঈন ও তাবে তাবেঈন (রা:)এর যুগে ইসলামী শহর সমূহে এরকম কোন শির্কী গর্হিত ঘটনা ঘটেনি- না নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কবরে না অন্য কারো কবরে।

****

জাযাকাল্লাহু খাইরান।